নোবেল বিজয়ী ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস বনাম বাংলাদেশ নোবেল কমিটির এসোসিয়েশন মেম্বার।

লিখেছেন লিখেছেন মোঃ মোরশেদুল আলম আরিফ ০৯ অক্টোবর, ২০১৭, ০৯:০৪:২৫ সকাল

সব ধারণা-জল্পনার অবসান ঘটিয়ে চলতি বছর বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক ও মূল্যবান নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছে পরমাণু অস্ত্রমুক্তির আন্তর্জাতিক প্রচারণা জোট ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন টু অ্যাবলিশ নিউক্লিয়ার উইপনস’ (ইকান)।

শুক্রবার (৬ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায় নরওয়ের রাজধানী অসলোতে শান্তিতে পুরস্কার মনোনয়ন কর্তৃপক্ষ নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির সংবাদ সম্মেলনে বিজয়ী হিসেবে এ জোটের নাম ঘোষণা করা হয়।

নোবেল কমিটির বিবেচনায় ‘যেকোনো পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি করতে পারে বলে বিশ্ববাসীর মনোযোগ আকর্ষণে কাজ করায় এবং এ ধরনের অস্ত্রের ওপর চুক্তির মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা আরোপের লক্ষ্য অর্জনে যুগান্তকারী প্রচেষ্টার জন্য’ ইকান এই পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে ইকানকে বিজয়ী ঘোষণা করে নোবেল কমিটির চেয়ার বেরিত রেইস-অ্যান্ডারসেন বলেন,

"আমরা এমন একটি বিশ্বে বাস করছি, যেখানে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের ঝুঁকি বিগত বহু বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।"

নিঃসন্দেহে নোবেল কমিটি সঠিক সিদ্ধান্তটা নিয়েছে। বাংলাদেশের জনসাধারণের পক্ষ থেকে নোবেল বিজয়ীকে অভিনন্দন। পরমাণুর অস্ত্রের ভয়ে ছোট ছোট রাষ্ট্রগুলো আজ মুখ তুলে কথা বলতে পারছে না। ঠিক এইসময় পরমাণু অস্ত্রের বিরুদ্ধে এইরকম একটা পদক্ষেপ প্রশংসনীয়।

একই সাথে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও অভিনন্দন জানাচ্ছি। কেননা তিনিও নোবেল পুরস্কারের জন্য একজন মনোনীত প্রার্থী ছিলেন।

নোবেল পুরস্কার নিয়ে নোবেল কমিটির চেয়ে বেশি চিন্তিত এবং গবেষণায় আছে আমাদের আশেপাশের সমাজ। কেন শেখ হাসিনা পেল না! তার পেছনে কারণ কি! বহিঃশত্রু কি এর পেছনে দায়ী! নাকি বিএনপির ষড়যন্ত্র! এইসব ব্যাপার নিয়ে সারাদিন কিছু মানুষ আলোচনায় লিপ্ত। ঠিক তেমনি একজন ব্যক্তির সাথে আমার কিছু কথা হয়। আমাদের এলাকায় একজন ব্যক্তি নোবেল পুরস্কার সম্পর্কে বক্তব্য পেশ করছেন চায়ের দোকানে। তার কথা শুনে মনে হল নোবেল কমিটি কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তার থেকে অনুমতি নিতে বাধ্য। কোন ব্যাপারে তর্কে যাওয়ার অভ্যাস আমার কম। কিন্তু ইচ্ছা হল লোকটার সাথে একটু কথা বলি।

আমিঃ ভাই কেমন আছেন?

লোকটিঃ ভাল নাইরে ভাই। নোবেলটা আমাদের প্রধানমন্ত্রী পাইল না!

আমিঃ তাতে কি হয়েছে? নোবেল পুরস্কারের জন্য তিনি মনোনীত ছিলেন। এটা কি কম!আর তাছাড়া যে পেয়েছে সে কি নোবেল পাওয়ার অযোগ্য?

লোকটিঃ ভাই এগুলো ইউনুসের কাম এগুলো! না হলে শেখ হাসিনা পেয়ে যেত। নোবেল কমিটি ঘুষ খাইছে।

আমিঃ (মনে মনে হেসে বললাম) হতে পারে। টাকা দিয়ে আজকাল সবকিছু করা যায়।

লোকটিঃ যদি হাসিনা আফা নোবেল পেত তাহলে পুরো পৃথিবীতে একটা ইতিহাস সৃষ্টি হয়ে যেত।

আমিঃ কেন কেন!?

লোকটিঃ আরে ভাই হাসিনা আফা একজন মেয়ে। মেয়েরা কি তেমন নোবেল টোবেল পায়!

আমিঃ মাদাম কুরি(মেরি কুরি) কে চিনেন?

লোকটিঃ এটা আবার কে?

আমিঃ উনি আমার একটা বড় আফা।

( স্থানটি ত্যাগ করা উত্তম বলে মনে করেছিলাম)

এরকম হাজারো মানুষ আছে আমাদের সমাজে। যারা কোনকিছু না বুঝে লাফালাফি শুরু করে দেই। সে যেটা বুঝবে সেটা আপনাকেও বুঝতে হবে। কারণ একমাত্র সে সব সঠিক বলছে। আপনি ভুলপথে আছেন। এইবার একজন শিক্ষিত ব্যক্তির কথা বলি। উনার নাম হল Gautam Roy । Probashi Kantha নামক একটি পত্রিকার Editor/Publisher তিনি। উনি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন --

"" এটা তো ভাবিনি আগে-

সুদের ব্যবসা করেও যদি ড. ইউনূস নোবেল পেতে পারেন, তাহলে শেখ হাসিনার নোবেল পুরস্কার নিয়ে এত কথা কেন?""

"" সুদ ব্যবসায় যদি নোবেল পাওয়া যায়, তবে আদম বেপারীরা কেন পায় না? দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কল্যানেই তো সব।

গরীবকে তো আর বাঁশ কেউ কম দেয় না।""

গৌতম ভাইয়ের সাথে ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসের ব্যক্তিগত সম্যাসা আছে কিনা আমার জানা নেই। নাহয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অতিরিক্ত ভালবাসা জ্ঞাপন করতে গিয়ে ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসের উপর নিজের সমস্ত রাগ ঝেড়ে ফেললেন। কেননা তিনি পানি আর তেল মিশিয়ে ফেলেছেন। পানি আর তেল মিশানোর কথা বলছি এই কারণে যে ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস নোবেল পেয়েছেন ২০০৬ সালে আর জননেত্রী শেখ হাসিনা নোবেলের জন্য মনোনীত হয়েছেন ২০১৭ সালে। ১১ বছরের ব্যবধান। যদি ডঃ ইউনুস এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নোবেলের জন্য একসাথে মনোনীত হত তাহলে গৌতম ভাইয়ের রাগটা যুক্তিসম্মত হত।" সুদ ব্যবসায়ী " অনেক চিন্তা করলাম বিষয়টা নিয়ে। ধর্মের ব্যাপার এখানে নিয়ে আসতে চায় না। কারণ আমার ধর্মে সুদ হারাম। তবে এই ব্যাপারে অল্প কিছু বলতে চায়।ডঃ ইউনুস গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছেন ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানের মাধ্যমে মানুষকে ব্যবসার দিকে ধাবিত করার চিন্তা ভাবনা নিয়ে। ১৯৭৬ সালের আগস্ট মাসে চট্টগ্রামে একটি প্রয়োগিক গবেষণা প্রকল্প হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সমর্থনে প্রকল্পটি সম্প্রসারণ হয়। যা পরবর্তিতে পৃথক ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। একটি ব্যাংকের মূল উদ্দেশ থাকে মুনাফা। ব্যাংক যা বিনিয়োগ করবে তা হতে মুনাফা আসতে হবে এই চিন্তা নিয়ে ব্যাংক বিনিয়োগ করে থাকে। গ্রামীণ ব্যাংকের সাথে অন্য ব্যাংকের তফাৎ ভিন্ন নই।তবে হালকা একটু ভিন্নতা রয়েছে। যা আমরা সহজ চোখে দেখি না। ভিন্নতাটা হচ্ছে যখন অন্যান্য ব্যাংক ১০০ ভাগ নিশ্চিত হওয়ার পর ধনীব্যক্তিদের ঋণ দিচ্ছে সেখানে ০ ভাগ নিশ্চয়তা নিয়ে গ্রামীণ ব্যাংক গরীবদের ঋণ দিয়েছে। সেটা ১ টাকা হোক বা ১০০০০ টাকা। ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানের মাধ্যমে যে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে সেটা একমাত্র ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস চিন্তা করেছিল। তাই সর্বপ্রথম ক্ষুদ্র ঋণের প্রবর্তক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে গ্রামীণ ব্যাংক এবং ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস। ডঃ ইউনুস গ্রামীণ ব্যাংক সম্প্রসারিত করার চিন্তা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। একটি ব্যাংক যদি বিনা সুদে টাকা মানুষকে দিয়ে থাকে তাহলে সেই ব্যাংক সম্প্রসারিত হওয়া দূরের কথা ১বছরও ঠিকে থাকতে পারবে না। ব্যাংকে যারা দায়িত্ব পালন করছেন তারা বিনা বেতনে চাকরি করবে না। তাদের বেতন দেওয়ার জন্য সুদের প্রয়োজন আছে। সুতরাং বিষয়টাকে শুধু সুদের নজরে দেখলে হবে না।

যারা বলেন ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস নোবেলের যোগ্য না তাদেরকে আমি সম্মানের সাথে একটা কথা বলতে চায় আপনি নিজে কিসের যোগ্য? নোবেল পুরস্কার এই পর্যন্ত কয়টা পেয়েছেন?

ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস শুধু নোবেল না আরো অনেক কিছু পেয়েছেন। তার মধ্যে কিছু তুলে ধরছি।

ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস গ্রামীণ ব্যাংক ছাড়াও ১৭টি জাতীয় কমিশন কমিটি এবং উপদেস্টা প্যানেলের দায়িত্ব পালন করেছেন। এগুলোর মধ্যে আছে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ,পল্লি উন্নয়ন, ঋণ নিষ্পত্তিসহ অনেকগুলো সংস্থা।

১৯৮৪ সালে তিনি "রেমন ত্যাগ সাই সাই পুরস্কার" লাভ করেন।

১৯৮৬ সালে "কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুরস্কার" লাভ করেন।

১৯৮৭ সালে "স্বাধীনতা পুরস্কার" লাভ করেন।

১৯৮৯ সালে লাভ করেন "আগাখান স্থাপত্য পুরস্কার"

১৯৯৪ সালে "বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার" লাভ করেন।

২০০০ সালে লাভ করেন "গান্ধী শান্তি পুরস্কার"

২০০৩ সালে "ভলভো পরিবেশ পুরস্কার" লাভ করেন।

২০০৬ সালে "নোবেল শান্তি পুরস্কার" লাভ করেন।

২০০৯ সালে "প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম" লাভ করেন।

২০১০ সালে লাভ করেন "কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল "।

ক্ষুদ্র ঋণ এবং তেভাগা খামার ধারণার উদ্ভাবক হচ্ছেন ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস। যাকে আপনারা আজ আপনাদের পায়ের জুতার সমতুল্য মনে করেন না। যার মুখ দিয়ে যা আসছে তাই বলে যাচ্ছেন।

পরিশেষে একটা কথা বলতে চায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মান দেখানোর জন্য ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসকে গালাগালি উচিত বলে মনে করছি না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নোবেল পাওয়া না পাওয়ার সাথে ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসের কোন হাত নেই বলে মনে করছি।

বিষয়: বিবিধ

৯০২ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

384169
০৯ অক্টোবর ২০১৭ রাত ০৯:২৬
হতভাগা লিখেছেন : নোবেল শান্তি পুরুষ্কারটি সবসময়েই বিতর্কের ।

ওবামা তার প্রথমবারের মেয়াদের শুরুর ৩ সপ্তাহে মাথায় নোবেলের জন্য মনোননিত হয়েছিলেন - কি এমন তিনি করেছিলেন সেই সময়ে ?

উনার আমলে কি পৃথিবীতে শান্তি নেমে এসেছিল নাকি যুদ্ধের বিস্তার ঘটেছিল ?

সূচির শান্তিতে নোবেল পাবার আফটার ইফেক্ট আমরা ভালই টের পাচ্ছি।

i-can তো নোবেল পেল শান্তিতে । তারা কি পারবে আমেরিকাকে কনভিন্স করাতে ''পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি করতে পারে'' এটা বলে ? কারণ পৃথিবীতে এরাই বেসামরিক মানুষের উপর পারমানবিক বোমা ফেলেছে এবং এদের পারমানবিক অস্ত্রও বেশী ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File